উপাত্ত কি? তথ্য কাকে বলে? তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর

উপাত্ত কি? তথ্য কাকে বলে? তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর

উপাত্ত কি? তথ্য কাকে বলে? তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর

ভূমিকা: গবেষণা বা অনুসন্ধানের জন্যে পরীক্ষণ ক্ষেত্র হতে যেসমস্ত উপাদান সংগ্রহ করা হয় বা গণনা করে পরিমাপ করা হয় তাকে তথ্য বা উপাত্ত বলে। তথ্যকে সামাজিক গবেষণায় তত্ত্ব তৈরির কাঁচামাল বলা হয়। তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণার উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করা হয়। একটি নির্দিষ্ট তাত্ত্বিক কাঠামোর ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষণাকর্মে একটি অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়।
উপাত্ত কি? তথ্য কাকে বলে? তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধর


তথ্য বা উপাত্ত (Data): সাধারণভাবে তথ্য বা উপাত্ত হলো পর্যবেক্ষণের ফল এবং এসব তথ্য এলোমেলো নয়; বরং অর্থপূর্ণ বা তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থ হলো তথ্য তাত্ত্বিকভাবে প্রাসঙ্গিক।

অন্যভাবে বলা যায়, গবেষণা বা অনুসন্ধানের পরীক্ষণক্ষেত্র হতে যেসমস্ত উপাদান সংগ্রহ করা হয় বা গণনা করে পরিমাপ করা হয় তাকে তথ্য বা উপাত্ত বলে। নিম্নে তথ্য বা উপাত্ত সম্পর্কে কতিপয় মনীষীদের সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো:
Johan Galtung-এর মতে, "A data is observed is manifest or phenotypical." (অর্থাৎ, উপাত্ত হচ্ছে কোন বিষয়ের অভিব্যক্তি বা সুপ্ত পর্যবেক্ষণ।)
K. D. Bailey-এর মতে, Data হচ্ছে, "The information gathered and analised in a study."
G. K. Adams বলেন, "Data is the information of observed about the world." (অর্থাৎ, "উপাত্ত হলো বিশ্ব সম্পর্কে তথ্য বা পর্যবেক্ষণ।")
উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, উপাত্ত কোন সামাজিক গবেষণার মূলভিত্তি। এটি হলো কোন বিষয় সম্পর্কে অভিব্যক্তি। অর্থাৎ, তথ্য বিশ্বের প্রতিটি একক থেকে যে তথ্য বা খবরাখবর নেওয়া হয় তাকে তথ্য বলে।

তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য লিখ?


ভূমিকা: সামাজিক গবেষণায় তত্ত্ব একটি মৌল প্রতায়। তত্ত্ব সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করে থাকে। সমাজে যেসব ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি একটি বা একাধিক তত্ত্বের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে। মূলত যে কোন বিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য তত্ত্ব প্রদান। আর এ তত্ত্বের প্রধান কাঁচামাল হলো তথ্য। তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

তথ্য ও তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য: তথ্য এবং তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বের এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তা দেওয়া হলো:
১. কোন ঘটনাবলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে বিচার করে ঘটনাবলি সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক উপায়ে একটি সার্বজনীন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়াকে তত্ত্ব বলে। এককথায়, পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সত্যই হলো তত্ত্ব।
অপরদিকে, কোন গবেষক যদি তার গবেষণা কর্মের জন্য মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন উপায়ে সূত্র আবিষ্কার করেন তবে সেগুলোকে তথ্য বলে।
২. তথ্য হলো কোন ঘটনার বর্ণনা। কিন্তু তত্ত্ব হলো বিভিন্ন তথ্যের পারস্পরিক সম্পর্কের বর্ণনা অথবা তথ্যগুলোকে অর্থপূর্ণভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার একটি পদ্ধতি।
৩. সামাজিক গবেষণার প্রাথমিক পর্যায় হলো তথ্য। অপরদিকে, সামাজিক গবেষণার শেষ স্তর হলো তত্ত্ব।
৪. সুশৃঙ্খল তথ্য বিজ্ঞান সৃষ্টির সহায়ক। অপরদিকে, সুশৃঙ্খল তত্ত্ব বিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণীকরণে সহায়ক।
৫. তত্ত্বের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। অপরদিকে, একটি সাধারণ তথ্যের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা
৬ তত্ত্বকে গবেষক বা বিজ্ঞানীর অনুসন্ধানের দিক নির্দেশনা দেয়। অপরপক্ষে, তথ্য বিজ্ঞানীর বা গবেষকের গবেষণার পদত নির্দেশনা প্রদান করে।
৭. তথ্য হলো পর্যবেক্ষণের ফল। অন্যদিকে, তত্ত্ব হলো গবেষণার ফল।
৮. তথ্য বাস্তব-অবাস্তব, নির্ভরযোগ্যতা, অনির্ভরযোগ্য ও সঠিক ভুল  পর্যবেক্ষণীয় অথবা পর্যবেক্ষণী নয় ইত্যাদি অবস্থায় থাকতে পারে। কিন্তু তত্ত্ব পরীক্ষনীয় বাস্তব ঘটনা ও সম্পর্কের উপর প্রতিষ্ঠিত।
৯. তথ্য কোন ঘটনার ব্যাপক বিশ্লেষণ। অন্যদিকে, তত্ত্ব হলো কোন ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
১০. তথ্য সংগ্রহ করার উৎসগুলো হলো মুখ্য উৎস এবং গৌণ সমষ্টি থেকে। কিন্তু তত্ত্ব সংগৃহীত হয় তথ্য সংগ্রহের সকল কলাকৌশলের সমষ্টি থেকে
১১. তথ্যের সত্যতা সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। যেমন: পানি নিচের দিকে গড়ায়, সূর্য পশ্চিমে অস্ত যায় ইত্যাদি। এই তথ্যগুলোর সত্যতা সর্বজনীন কিন্তু তত্ত্বের সত্যতা সর্বত্র গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন-ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব। এটির সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

উপসংহার: তত্ত্ব ও তথ্য পরস্পর বিরোধী নয়, বরং বিভিন্ন জটিল উপায়ে তথ্য ও তত্ত্ব অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতিকে তত্ত্ব ও তথ্যের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ফল হিসেবে দেখানো যায়। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মূল ভিত্তি হলো তথ্য এবং তত্ত্বের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post